দুই তীরে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমি ভালোবাসি আমার
নদীর বালুচর,
শরৎকালে যে নির্জনে
চকাচকির ঘর।
যেথায় ফুটে কাশ
তটের চারি পাশ,
শীতের দিনে বিদেশি সব
হাসের বসবাস।
কচ্ছপেরা ধীরে
রৌদ্র পোহায় তীরে,
দু-একখানি জেলের ডিঙি
সন্ধেবেলায় ভিড়ে।
ভূমি ভালোবাস তোমার
ওই ও পারের বন,
যেথায় গীথা ঘনচ্ছায়া
পাতার আচ্ছাদন।
যেথায় বাঁকা গলি
নদীতে যায় চলি,
দুই ধারে তার বেণুবনের
শাখায় গলাগলি।
সকাল-সন্ধেবেলা
ঘাটে বধূর মেলা
ছেলের দলে ঘাটের জলে
ভাসে ভাসায় ভেলা।
(সংক্ষেপিত)
১. কবিতার মূলভাব জেনে নিই।
একটি নদী, তার দুই তীরে দু-জন মানুষ বাস করে। একজন ভালোবাসে তার নদীর বালুচর, শরৎকালে চকাচকিরা যেখানে ঘর বাঁধে। এর তীরে তীরে ফুটে থাকে কাশফুল। শীতের সময় হাঁসেরা এসে ভিড় করে, কচ্ছপ রোদ পোহায়। সন্ধ্যায় জেলের ডিঙি এসে ভেড়ে। অন্যজন ভালোবাসে বন, যার আছে ঘন ছায়া। সেখান থেকে একটা রাস্তা এসে মিশেছে নদীতে। নদীর ঘাটে বধূরা আসে, ছেলেরা জলে ভেলা ভাসায়। একটি নদী দুই তীরের মানুষকে কী সুন্দর মিলিয়ে দিয়েছে।
২. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
নির্জন চকাচকি তট ভিত্তি আচ্ছাদন বেণুবন
৩. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি আয়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি ।
চকাচকিরা আচ্ছাদন তটে বেণুবন নির্জ্জন ডিঙি
ক. এলাকাটি এত.............. যে গা ছমছম করে।
খ. নদীর ধারে………………..দল বেঁধে উড়ে বেড়ায় ।
গ. গ্রামের ছোট ছোট নদীগুলো দিয়ে মানুষ………করে নদী পারাপার হয়।
ঘ. নদীর দু…………………প্রতিবছর মেলা বসে।
ঙ.নদীর তীরে বটগাছটি বর্ষাকালে মানুষ………………হিসাবে ব্যবহার করে।
চ. নদীর ধারে গজিয়ে ওঠা ........................................ বাতাসে দুলতে থাকে ।
৪. নিচের কথাগুলো বুঝে নিই ।
তুমি ভালোবাস তোমার
ওই ও পারের বন,
যেথায় গীথা ঘনচ্ছায়া
পাতার আচ্ছাদন।
৫. প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
ক. নদীর বালুচরে কী ঘটে?
খ. দুই তীরে দু-জন মানুষের ভালো লাগার জিনিসগুলো কী?
গ. ঘাটে বধূর মেলা বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
ঘ. দুই তীরে কবিতায় ওই পারের বনটি কেমন?
ঙ. সকাল-সন্ধেবেলা ছেলের দল কী করে?
৬. কবিতাটি আবৃত্তি করি।
৭. কর্ম-অনুশীলন ।
শূন্যস্থানে কথা বসিয়ে একটি কবিতা বা ছড়া লেখার চেষ্টা করি।
………………………………………….মাস,
…………………………………………বাশ।
…………………………………………চম
…………………………………………ঘর ।
…………………………………………মন,
…………………………………………বন।
কবি পরিচিতি
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই মে, ১২৬৮ বাংলা সনের ২৫শে বৈশাখ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শুধু কবি নন, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, দার্শনিক, গীতিকার, সুরস্রষ্টা, চিত্রশিল্পী, সমাজসেবী ও শিক্ষাবিদ। তাঁর রচনাভাণ্ডার বিশাল। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই আগস্ট, ১৩৪৮ বাংলা সনের ২২শে শ্রাবণ, তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আরও দেখুন...